জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়

প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী রোগ জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া প্রতিবছর বহু মানুষের জীবনকে হুমকিতে ফেলে। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলছেন, একবার রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। এটি মূলত র্যাবিস ভাইরাসজনিত রোগ, যার নামই জলাতঙ্ক বা হাইড্রোফোবিয়া। এই রোগে আক্রান্ত হলে পানি দেখলেই বা পানির কথা মনে পড়লেই রোগী প্রচণ্ড আতঙ্ক অনুভব করেন।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক আক্রান্ত মানুষ কুকুরের কামড় থেকে সংক্রমিত হন। তবে কুকুর ছাড়াও শিয়াল, বিড়াল, বাদুড়, বানরসহ অন্যান্য প্রাণীর কামড়েও রোগের ঝুঁকি থাকে। আক্রান্ত প্রাণী বা মানুষ যদি সুস্থ কাউকে কামড়ায়, তাহলে সেই ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জলাতঙ্কের সাধারণ লক্ষণ
বিজ্ঞাপন
কর্কশ কণ্ঠস্বর
খিটখিটে মেজাজ ও অকারণে আক্রমণ প্রবণতা
খাবারে অরুচি ও অস্বাভাবিক কথাবার্তা
বিজ্ঞাপন
উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো
পানি দেখলেই বা পানির কথা মনে পড়লেই আতঙ্ক
আলো বা বাতাসের সংস্পর্শে ভয় বৃদ্ধি
বিজ্ঞাপন
একা থাকার প্রবণতা, অন্ধকারে বা চোখের আড়ালে থাকতে পছন্দ
খিঁচুনি এবং মুখে অতিরিক্ত লালা বের হওয়া
টিকা
বিজ্ঞাপন
এ রোগ থেকে বাঁচতে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগীরা লক্ষণ দেখার এক সপ্তাহের মধ্যে মারা যান। তবে রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে শরীরে টিকা প্রয়োগ করতে পারলে মৃত্যু এড়ানো যায়।
করণীয় ও প্রতিরোধ
বিজ্ঞাপন
প্রাণী আঁচড় বা কামড় থেকে সতর্ক থাকুন। তারপরও প্রাণীর হামলার শিকার হলে এ বিষয়ে ঢাকার মহাখালীর ইনফেকশন ডিজেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বিকাশ কুমার সরকার বলছেন, আক্রান্ত স্থান রক্তপাত বন্ধে চেপে ধরুন। ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংসে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ( কাপড় ধোয়ার সাবান) দিয়ে আক্রনান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধরে ধুয়ে নিন।
দ্রুত হাসপাতাল বা ফার্মেসিতে যান। ক্ষতস্থান প্রথমে পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট পরে ক্লোরহেক্সিডিন বা পোভিডোন আয়োডিন দিয়ে ধুয়ে দিন। অ্যান্টিবায়োটিক মলমের প্রলেপ দিয়ে ব্যান্ডেজ করুন।
বিজ্ঞাপন
চিকিৎসকরা বলছেন, জলাতঙ্কের কার্যকর চিকিৎসা নেই, তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। রোগের লক্ষণ প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের পরপরই আক্রান্ত স্থানে চাপ দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। এরপর অন্তত ১৫ মিনিট অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে ক্ষত ধুয়ে ফেলতে হবে। পরে ক্ষতস্থান ক্লোরহেক্সিডিন বা পোভিডোন আয়োডিন দিয়ে পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করা জরুরি।
বিজ্ঞাপন
ক্ষতস্থানে স্যালাইন, বরফ, চিনি, লবণ বা ইলেকট্রিক শক কখনোই ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি সেলাই করাও বিপজ্জনক। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে প্রয়োজনীয় টিকা নিতে হবে।
চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেন, জলাতঙ্ক প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো সময়মতো টিকা গ্রহণ। তাই প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ের শিকার হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।