শুধু লোক বদলে দিলেই দেশ বদলে যাবে না, বদলাতে হবে সিস্টেম

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শুধু লোক বদলে দিলেই দেশ বদলে যাবে না, বদলাতে হবে সিস্টেম। যারা আগুন লাগায় কিংবা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়—তারা সবাই রাষ্ট্র ও সমাজের অভিন্ন প্রতিপক্ষ। সহিংসতার পথ বেছে নিয়ে কোনো পরিবর্তন আনা যায় না, মতভিন্নতা থাকলেও সংযম ও দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়েই সামনে এগোতে হবে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন কেন হেলিকপ্টার বা কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়নি। বাস্তবতা হলো, ওই পরিস্থিতিতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করলে বাতাসের কারণে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ছিল। একইভাবে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সে সময় একমাত্র লক্ষ্য ছিল, সেখানে আটকে পড়া ২৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই দফায় আগুন লাগানো হয়। প্রথম দফায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও দ্বিতীয় দফার আগুনে পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে। পরে জানা যায়, আটকে পড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও সেখানে ছিলেন। ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটে ছাদ থেকে সবাইকে নিরাপদে নামানো সম্ভব হয়।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার বা তিনি নিজে নির্লিপ্ত ছিলেন—এমনটি নয়। তবে প্রো-অ্যাকটিভ হতে না পারার কারণে যেমন গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি সরকারও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই ঘটনা সরকারকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে এবং এটি ছিল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
তিনি আরও বলেন, কোনো সংবাদমাধ্যম বা মতাদর্শ অপছন্দ হলে তার জবাবে সহিংসতা কোনো সমাধান হতে পারে না। ভিন্নমত থাকলে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা বা নিজের বক্তব্য তুলে ধরাই গণতান্ত্রিক পথ। একটি প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে সমস্যার সমাধান ভাবা চরম ভুল।
বিজ্ঞাপন
রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, জুলাই মাসে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও নিউ এইজ আন্দোলনের খবর প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন মাধ্যমেও চ্যানেল টোয়েন্টিফোর ও যমুনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, নিজেদের মধ্যে আত্মসমালোচনা ও আত্মমূল্যায়ন জরুরি।
বিজ্ঞাপন
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দেখেছেন, প্রায় সবারই কোনো না কোনো রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। তবে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রভাব রাখা যাবে না। গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক—এদের আলাদা করার সুযোগ নেই।
উপদেষ্টা বলেন, যারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বা সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে, তারা সবাই আমাদের অভিন্ন প্রতিপক্ষ। এমনকি তার বাসার সামনেও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এই বাস্তবতায় পেশাদারিত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা যাবে না। একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবলে দেশ এগোবে না।
সবশেষে তিনি বলেন, একটি ভেঙে পড়া ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সরকারকে প্রশাসন পরিচালনা করতে হচ্ছে। এই সরকারকে বড় পরিসরে সংকট মোকাবিলার দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তবে এই যাত্রায় সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না।








