যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পথে বিএনপি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার পথে এগোচ্ছে বিএনপি। প্রায় দেড় ডজন আসনে ধানের শীষের প্রার্থী না রেখে মিত্রদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি আলোচনা ছাড়াই একাধিক ধাপে প্রার্থী ঘোষণা করায় বিএনপির সঙ্গে দীর্ঘদিনের মিত্রদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় ধাপে ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ওই তালিকায় অন্তত আটটি আসনে ছোট দলের প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা করছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই জোট ছাড়ার ঘোষণাও দেন।
এই প্রেক্ষাপটে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। তার বক্তব্যে জোটের ভেতরের টানাপড়েন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিজ্ঞাপন
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএনপি দ্রুত আস্থাভাজন শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। লিয়াজোঁ কমিটির উদ্যোগে জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক শুরু হয়েছে। এসব আলোচনায় নির্বাচনী পরিবেশ, জনসমর্থনের বাস্তব চিত্র, নিজ নিজ দলের সাংগঠনিক শক্তি, প্রতিপক্ষের অবস্থান এবং দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হচ্ছে। বৈঠকের সারসংক্ষেপ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হচ্ছে, তার পরই চূড়ান্ত হবে কারা বিএনপির নির্বাচনী সঙ্গী থাকছেন।
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের পরীক্ষিত কয়েকজন শরিক নেতার আসনে এখনও বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। এর মধ্যে রয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, মোস্তফা জামাল হায়দার, জোনায়েদ সাকি, নুরুল হক নুর, রাশেদ খান এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের চার শীর্ষ নেতা। তবে অন্যদিকে এহসানুল হুদা, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, আহসান হাবিব লিংকন ও সাইফুল হকের আসনে ইতোমধ্যে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এতে জোটের ঐক্য কতটা অটুট থাকবে—সে প্রশ্নও উঠেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলন কারও ব্যক্তিগত স্বার্থে হয়নি, লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার পতন। যারা দেশকে ভালোবাসে, তারা ঐক্য ছেড়ে যাবে না বলেই তার বিশ্বাস। যোগ্য প্রার্থী না থাকলে শুধু দলীয় পরিচয়ের কারণে কাউকে দাঁড় করিয়ে নির্বাচনে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়াও যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো দল এককভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে না। সমঝোতা ও যৌথভাবে এগোনোর বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা মনে করেন, এই সময়ে ব্যক্তিগত বা দলীয় হিসাবের চেয়ে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ছোট দলগুলোকে উপেক্ষা করলে তা বিএনপির জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
সব মিলিয়ে, জোটের ভেতরের টানাপড়েন কাটিয়ে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ঐক্য ধরে রাখাই এখন বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।








