স্ত্রীর মৃত্যুর ১১ ঘণ্টা পর স্বামীরও শেষ নিঃশ্বাস

ভালোবাসার শেষ নেই, এমনকি মৃত্যুতেও নয় -এই সত্যের এক নিদর্শন দেখা গেল নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাদিবাড়ী গ্রামে। সেখানে স্ত্রীর মৃত্যুর মাত্র ১১ ঘণ্টা পর চলে গেলেন তার স্বামীও। জীবনের মতো মৃত্যুতেও পাশাপাশি রইলেন তারা।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কাদিবাড়ী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. জলিলুর রহমান জলিল (৭৫) ও তার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৬৫) ছিলেন অটুট ভালোবাসার প্রতীক। দীর্ঘ ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তারা কখনও একদিনও আলাদা থাকেননি। জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সবই ভাগাভাগি করেছেন একে অপরের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: হঠাৎ ভয়াবহ ঝড়ে লন্ডভন্ড নওগাঁ
কিন্তু হঠাৎ করেই সেই ভালোবাসার গল্পে নেমে আসে বেদনার অধ্যায়। শুক্রবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আঞ্জুয়ারা বেগম। স্ত্রীর মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়েন জলিলুর রহমান। বিকেল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রাতে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দিবাগত রাত ১২টা ২৫ মিনিটে তিনিও পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
বিজ্ঞাপন
একই দিনে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর খবরে গোটা কাদিবাড়ী গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সকাল থেকেই তাদের বাড়িতে ভিড় করেন প্রতিবেশী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কেউ চোখের পানি আটকাতে পারেননি।
দুইটি কফিন পাশাপাশি শুয়ে থাকতে দেখে গ্রামের প্রবীণরা বলেন, “জীবনে একসঙ্গে ছিলেন, মৃত্যুতেও পাশাপাশি রইলেন।”
বিজ্ঞাপন
ছোট ছেলে রাকিবুল হাসান রকি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “মা মারা যাওয়ার পর বাবা বলেছিলেন, ‘তোমার মাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।’ কথা রাখলেন তিনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “তাদের ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ ও সত্যিকারের। একে অপর ছাড়া কেউ কিছু ভাবতে পারতেন না। তাই হয়তো একজন চলে যাওয়ার পর আরেকজনের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়নি।”
শনিবার সকালে গ্রামের কবরস্থানে তাদের একসঙ্গে দাফন করা হয়। পাশাপাশি দুটি কবর এখন নিঃশব্দে সাক্ষ্য দিচ্ছে এক চিরন্তন ভালোবাসার। যেখানে মৃত্যু নয়, আছে অনন্ত একসাথে থাকা।








