ঝালকাঠিতে শিক্ষক সমাবেশে আ.লীগ–বিএনপি নেতারা একই মঞ্চে: রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা

ঝালকাঠির রাজাপুরে ত্রিবার্ষিক শিক্ষক সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের একই মঞ্চে উপস্থিতি ঘিরে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিভাজনে তপ্ত স্থানীয় অঙ্গনে ঘটনাটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত বিএনপি নেতাদের অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগপন্থী একজন স্থানীয় নেতার অংশগ্রহণে দলের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উপজেলার উত্তর উত্তমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলার ৫৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক হাজারেরও বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণে ‘ত্রিবার্ষিক শিক্ষক সমাবেশ–২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ঝালকাঠি–১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম জামাল।
মঞ্চে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি আব্দুল হক নান্টুসহ দলের আরও কয়েকজন নেতা। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে আরেক অতিথির উপস্থিতি—রাজাপুর সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উত্তর উত্তমপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাঈনুল তালুকদার।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানজুড়ে তাকে সঞ্চালনা করতে, বক্তব্য রাখতে এমনকি প্রধান অতিথিকে ক্রেস্ট প্রদান করতেও দেখা গেছে। এতে শিক্ষক সমাবেশের বৈধতা নিয়ে নয় বরং রাজনৈতিক ব্যাখ্যা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাঈনুল তালুকদার বলেন, “এটি মোটেও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। শিক্ষকদের সমাবেশে আমি একজন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠান হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যুবলীগের সভাপতি, তবে রাজনৈতিক কারণে কোথাও লুকিয়ে নেই। নিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করছি। শিক্ষকদের আয়োজনে রাজনৈতিক রং খোঁজা ঠিক নয়।”
বিজ্ঞাপন
এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শিক্ষকদের আমন্ত্রণে আমরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি। সে যুবলীগের সভাপতি সেটা জানি না।
অন্যদিকে, সমাবেশের প্রধান অতিথি রফিকুল ইসলাম জামালও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ঘটনাটিকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, “এটি ছিল শিক্ষক সমাবেশ। তারা আমাকে ভালোবেসে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এখানে রাজনৈতিক দলীয় পরিচয়ের বিষয় নেই।”
বিজ্ঞাপন
এবিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম জামাল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা এবং নিজেকে হাইলাইট করার জন্য যে সব কার্যক্রম চালাচ্ছে সে গুলো দলের জন্য মোটেও কাম্য নয়৷
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রফিকুল ইসলাম জামাল আওয়ামী লীগের লোক এবং বিএনপির পদ স্থগিত ও বহিষ্কারের লোক নিয়ে সভা সমাবেশ করে। রাজাপুরে দীর্ঘদিন ধরে দুই দলের মধ্যে বৈরিতা থাকলেও এই ঘটনাটি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় পরিস্থিতিটি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করছেন তারা। ঝালকাঠির রাজাপুরে শিক্ষক সমাবেশ তাই এখন শুধুই শিক্ষাবিষয়ক আয়োজন নয়—এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।








