বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথে নতুন গতি, ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ

দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি আবারও আলোচনায় এসেছে। এক সময় ভারতের ঋণে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাঝপথে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় থমকে যায় প্রকল্পটি।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ অনিশ্চয়তার পর নতুন করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে একটি প্রাক-উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি), যেখানে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা—যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
এর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘বগুড়া হতে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ প্রকল্পে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ এবং বাকি ২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করার কথা ছিল।
বিজ্ঞাপন
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টের পর ভারত প্রকল্পটির অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ালে এটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে নতুন অর্থায়নের সন্ধানে এবং ব্যয় পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রকল্পটি আবার এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
নতুন পিডিপিপির পাশাপাশি প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিনিয়োগকারীও খোঁজা হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মৌখিকভাবে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এখনো তারা অর্থনৈতিক বিভাগ বা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আগ্রহপত্র দেয়নি।
প্রকল্প পরিচালক আবু জাফর মিঞা ব্যয় বৃদ্ধির কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আগের ডিপিপি করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। এখন ২০২৫ চলছে। নতুন করে অর্থায়ন সংগ্রহ, ডিপিপি অনুমোদন ও দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। ফলে প্রায় ১০ বছরের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী ও ভূমি অধিগ্রহণের খরচ অনেক বেড়েছে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও জানান, আগের ডিপিপি অনুমোদনের সময় কোনো পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা ছিল না। এবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশার ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০২ একর জমি প্রয়োজন হবে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অল্প যে অংশ বাকি আছে, তা দ্রুত শেষ করা হবে। জমি প্রস্তুত থাকায় ঠিকাদার নিয়োগের পর নির্মাণকাজে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, বর্তমানে রেলপথে ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব প্রায় ৩২৪ কিলোমিটার। বগুড়া–সিরাজগঞ্জ সংযোগ রেললাইন নির্মিত হলে এই দূরত্ব কমে দাঁড়াবে মাত্র ১১২ কিলোমিটার। ফলে যাত্রীদের সময় ও ভাড়া দুটোই কমবে। প্রকল্পের আওতায় ৮৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ মেইন লাইন, ৩৭ কিলোমিটার লুপ ও ইয়ার্ড, স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।








