ক্রীড়াঙ্গনের দৃষ্টি থাকবে যেসমস্ত আসনের দিকে


Janobani

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:১২ পূর্বাহ্ন, ৭ই জানুয়ারী ২০২৪


ক্রীড়াঙ্গনের দৃষ্টি থাকবে যেসমস্ত আসনের দিকে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে রবিবার (৭ জানুয়ারি)। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশবাসী। আর এ নির্বাচনে ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিরাও তাকিয়ে থাকবেন বিশেষ কয়েকটি আসনের দিকে। সাবেক ও বর্তমান ক্রীড়াবিদরা বেশ কয়েকটি আসনের প্রার্থী হয়েছেন। এমনকি ক্রীড়া সংগঠকরাও লড়ছেন বিভিন্ন আসনে।


যেসব আসনের দিকে ক্রীড়াঙ্গনের দৃষ্টি থাকবে—


নড়াইল-২ (মাশরাফি বিন মুতর্জা): একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চমক ছিলেন টাইগারদের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। নড়াইল-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ম্যাশ। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন দেশের এই তারকা ক্রিকেটার। মাশরাফির আসনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো আভাস নেই।


আরও পড়ুন: তারকা ব্যাটার ওয়ার্নারকে শয়তান ডাকেন খাজার মা


মাগুরা-১ (সাকিব আল হাসান): এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে হাজির হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের দলপতি সাকিব আল হাসান। তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে নিজ জেলা মাগুরা-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের বিপক্ষে তেমন কোনো শক্ত প্রার্থী নেই। বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও সাকিবের আসনে তেমনটা ঘটে নাই। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর  মনোনয়ন না পেলেও সাকিবের পক্ষেই কাজ করছেন। 


নেত্রকোনা-২ (আরিফ খান জয়): ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার একমাত্র কৃতিত্ব আছে সাবেক জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আরিফ খান জয়ের। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে নেত্রকোনা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী হন। এর পরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন করেননি তিনি। আর এবারও দলীয় মনোনয়ন পাননি জয়। তবে এবার স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন নিজ আসনে। বিগত কয়েক বছর তৃণমূলে কাজ করার সুবাদে এবার জয়ের ব্যাপারেও বেশ আশাবাদী সাবেক এই ফুটবলার।


আরও পড়ুন: টেস্ট সিরেজে হোয়াইটওয়াশ পাকিস্তান, দোষ অধিনায়কের ঘাড়ে


মানিকগঞ্জ-২ (দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল): সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুলের  ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামীপন্থি ক্রীড়াবিদ-সংগঠকদের আলোচনায় সবার আগে নাম আসে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ২০০১ সালে নিজ জেলা মানিকগঞ্জ-২ থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। তবে গত নির্বাচনগুলোতে মনোনয়ন পাননি টুটুল। কিন্তু এবার দলের বাইরে স্বতন্ত্র নির্বাচনের সুযোগ থাকায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এবার নির্বাচনে মোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন টুটুল। এই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বর্তমান এমপি মমতাজ বেগম এবং আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তারই চাচাতো ভাই দেওয়ান জাহিদ আহমেদ (টুলু)। 


নোয়াখালী-২ (আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক): আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক বাফুফের নতুন সহ-সভাপতি। তিনি ক্রীড়াঙ্গনে সংগঠক হিসেবে পথচলা শুরু করেছেন সম্প্রতি সময়ে। তবে বাফুফের সহ-সভাপতি হয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মানিক। তার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও রাজনীতির অঙ্গনেও পদচারণা ছিল।নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন মানিক। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন মানিক। এ আসনে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বর্তমান সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোরশেদ আলম। বিভিন্ন সূত্রের খবর, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া সকল প্রার্থীরা মানিককে সমর্থন দেওয়ায় তার জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে।


আরও পড়ুন: এবার সাকিবের নির্বাচনী মাঠে এনামুল হক বিজয়


খুলনা-৪ (আব্দুস সালাম মুর্শেদী): সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ আসনে দুই বারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তৃতীয় বারের মতো তিনি এই আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। আব্দুস সালাম মুর্শেদীর মূল প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোর্তজা রশিদী দারা। তিনিও ক্রীড়াঙ্গনের লোক। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক, খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের সদস্য। খুলনা জেলার রাজনীতির সঙ্গে তাদের পরিবার অনেক আগে থেকেই সম্পৃক্ত। তার বড় ভাই এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। দারার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরই মূলত সালাম মুর্শেদী এই আসনের সংসদ সদস্য হন। এই আসনটিতে মূলত ক্রীড়াঙ্গনের লড়াই।  


যশোর-৩ (কাজী নাবিল আহমেদ): দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাফুফের সহ-সভাপতি পদে নাবিল ১৫ বছর ধরে আছেন। ক্রীড়া সংগঠক থেকে রাজনীতি অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নাবিল। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবং ২০১৮ সালেও নির্বাচিত হন তিনি। আর এবার তৃতীয় বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নাবিল। তবে ক্রীড়াঙ্গনের দৃষ্টি থাকবে এই আসনের দিকে। 

 

কিশোরগঞ্জ-৬ (নাজমুল হাসান পাপন): নাজমুল হাসান পাপন রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা প্রয়াত জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এবং বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তার মা প্রয়াত আইভি রহমানও আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মী ছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন তিনি। গত এক দশকে রাজনীতির ময়দানের থেকেও ক্রীড়াঙ্গনে বেশি পরিচিতি হয়েছে পাপনের। দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা বিসিবির সভাপতি পাপন। ২০১২ সাল থেকে বিসিবির সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন তিনি। বিসিবির বস ছাড়াও ঢাকা আবাহনীর অন্যতম পরিচালক পাপন। তবে এই আসনে তেমন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস নেই। এরপরও ক্রীড়াঙ্গনের চোখ থাকবে এই আসনের দিকে কত ভোটে জয়ী হলেন পাপন।


আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ‘ডি’ গ্রুপে বাংলাদেশ


ঢাকা-১ (সালমান এফ রহমান): সালমান এফ রহমান দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি। ব্যবসায়ী ও রাজনীতি অঙ্গনে তার পরিচিতি বেশি হলেও ক্রীড়াঙ্গনেও রয়েছে তার বিশাল পরিচিতি। দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা আবাহনীর চেয়ারম্যান হলেন সালমান এফ রহমান। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি ক্লাবটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। লিমিটেড হওয়ার আগে থেকেই ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।


ঢাকা-৯ (সাবের হোসেন চৌধুরি): সাবের হোসেন চৌধুরি বাংলাদেশের ক্রিকেটের নব রূপকার। বিসিবির সাবেক এই সভাপতি টানা কয়েকবার ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নিজ আসন থেকে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক বিসিবি বস। এই আসনে কোনো শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায়, খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হচ্ছে না সাবের হোসেন চৌধুরির।


ঢাকা-৮ (বাহাউদ্দিন নাছিম): বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিকেন্দ্রীকরণ তেমন হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা প্রায় সবই ঢাকাকেন্দ্রীক হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকার মতিঝিল ও পল্টন এলাকার মধ্যে অধিকাংশ ফেডারেশন ও ক্রীড়া স্থাপনা আছে। ক্রীড়া অঞ্চলের সংসদ সদস্য কে নির্বাচিত হন এ নিয়েও বেশ কৌতুহল রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। এই আসনেও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। খুব বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যায়নি।


আরও পড়ুন: নতুন কোচ চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিসিবি


চট্টগ্রাম-১২ (সামছুল হক চৌধুরি): বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের ভিতরে অনেকেই এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। এদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের প্রভাবশালী সামছুল হক চৌধুরি এমপি। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তিনি। তিনি বাফুফের সাবেক সদস্য এবং প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের দল চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব। এই আসনে বাড়তি আগ্রহ আছে ক্রীড়াঙ্গনের, কেননা এই আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন বাফুফের সদস্য ও সাবেক তারকা ফুটবলার সত্যজিত দাশ রুপু। কিন্তু তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন না করে নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন।


গাজীপুর-২ (জাহিদ আহসান রাসেল): ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক নন, ক্রীড়াঙ্গনের এরপরও গাজীপুর-২ আসনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকবে। কারণ বর্তমান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাহিদ আহসান রাসেল ওই আসনের প্রার্থীতা পেয়েছেন। তার বিপক্ষে কিছু  স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করছেন। তবে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে আছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর।


আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দক্ষতার ফল পেলেন সৈকত 

  

বিভিন্ন ফেডারেশনের আরও যারা নির্বাচন করছেন:


ফুটবল, ক্রিকেট ছাড়া বাকি সব ফেডারেশনের সভাপতি সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি। বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতি বর্তমান এমপি, আবার মন্ত্রীও রয়েছেন। এদের অনেকেই পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আবার প্রথমবারের মতো নির্বাচনে লড়ছেন কেউ কেউ। রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ নিজ জেলা ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করছেন। এবং সাইক্লিং ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সানজিদা খানম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ঢাকা-৪ আসন থেকে। এদিকে ঢাকা আবাহনীর পরিচালক নসরুল হামিদ বিপু ও শাহরিয়ার আলমসহ আরও অনেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, যাদের ক্রীড়াঙ্গনের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে।


এমএল/