শিল্পকলা থেকে বিতাড়িত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন জ্যোতি


Janobani

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, ১৭ই সেপ্টেম্বর ২০২৪


শিল্পকলা থেকে বিতাড়িত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছেন জ্যোতি
ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমিতে গেলে সহকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন নায়িকা জ্যোতিকা জ্যোতি। মূলত এদিন দুপুরে শিল্পকলার নতুন মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।


এ ঘটনার পরপরই মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সোশ্যাল মাধ্যমে এসে লাইভে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। লাইভে একপর্যায়ে প্রশ্ন রেখে অভিনেত্রী বলেন, এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল? কোনো একটি দলের সমর্থক ছিলাম বলে কি দেশটা আমার নয়? তাহলে আমি কোথায় যাব? আমাকে নিয়ে অনেকে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন, আমি ঠিক আছি কি না। তাদের উদ্দেশে বলছি, আমি ঠিক আছি। তবে মানসিকভাবে আমি একদমই ভালো নেই। জানি না কতদিন লাগবে এসব কাটিয়ে উঠতে।


আরও পড়ুন: সহকর্মীদের বাধার মুখে শিল্পকলা ছাড়লেন জ্যোতিকা জ্যোতি


শিল্পকলা একাডেমিতে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অভিনেত্রী বলেন, দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমিতে পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলাম। এখনও আমার মেয়াদ শেষ হয়নি এবং নিয়োগ বাতিলেরও কোনো প্রক্রিয়া এখনও হয়নি। সুতরাং এখনো আমার চাকরিটা আছে। গত দুই মাস ধরে দেশে যা চলছে, তারপর থেকে শিল্পকলা একাডেমির অফিসের কাজ মোটামুটি বন্ধই বলা যায়। সপ্তাহখানেক হয়েছে নতুন ডিজি এসেছেন, তাই আমার মনে হয়েছে আমার অফিসে যাওয়া উচিত। যদিও সচিব স্যারের, পরামর্শ ছিল-আমি যেন এখন শিল্পকলায় না যাই। কিন্তু আমার চাকরি তো এখনও আছে। আমারও ভালো লাগছিল না, আর তাই গিয়েছিলাম।


তিনি আরও বলেন, শিল্পকলায় যাওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে অনেক সাংবাদিক ফোন করে জানতে চাচ্ছিলেন, আমার অবস্থা সম্পর্কে। কারণ, তারা জানতে পেরেছেন আমাকে নাকি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমি তখনও বিষয়টি জানি না। আমার আরেক সহকর্মী ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, চলো বেরিয়ে যাই। আমি তাকে বলি, আমার চাকরি তো শেষ হয় নাই, তাহলে আমি কেন যাব এখান থেকে? প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমার নিয়োগ বাতিল হলে অবশ্যই আমি আর আসব না।


আরও পড়ুন: এবার অরুণা বিশ্বাস-রোকেয়া প্রাচীর বিরুদ্ধে মামলা


শিল্পকলা একাডেমির ডিজির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা জানিয়ে জ্যোতি বলেন, আমি যখন শিল্পকলায় যাই তখন ডিজি স্যার একটা মিটিংয়ে ছিলেন। এরপর উনি যখন বের হন, তখন আমি ওনার সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে দেখি শিল্পকলায় অনেক লোকজন চেঁচামেচি করছে। আমি ডিজি স্যারের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যার বললেন, দেখেন এই অবস্থা। এর মধ্যে অফিসে কেন এসেছেন? আপনারা বরং চলে যান, পরিস্থিতি সামলাতে দেন। পরে এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয় সে মোতাবেক কাজ করবেন।


সহকর্মীদের আচরণে বিস্মিত হয়ে অভিনেত্রী বলেন, ডিজি স্যারের সঙ্গে কথা বলে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু উনারা কোনো কথায় বলবেন না। শুনতে পেলাম, আরও লোকজন খবর দেওয়া হয়েছে। আমাদের আটকে রাখবে বা কিছু করবে। আমার খুবই অবিশ্বাস্য লাগছিল, সবার মুখ অপরিচিত লাগছিল। কারণ, এরাইকি আমার সহকর্মী ছিলেন!


জানা গেছে, অফিসে ব্যক্তিগত কিছু জিনিসপত্র ছিল এই অভিনেত্রীর। চলে আসার সময়ে সেসব জিনিস নিয়ে আসেন। কিন্তু উপস্থিত সহকর্মীদের সেসব জিনিসপত্র দেখিয়ে তারপরই সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছেন তিনি।


বিষয়টি উল্লেখ করে জ্যোতি বলেন, লবি থেকে আমার অফিস রুমে গিয়ে জিনিসপত্র (মায়ের ছবি, কসমেটিকস) গোছাই। ওই সময়ে আমার জেদ হয়, আমার চাকরি থাকার পরও আমি কেন অফিস ছাড়ব! ইতোমধ্যে অনেকে আমার দরজার সামনে জড়ো হয়। তখন আমার সঙ্গে সচিব স্যার ছিলেন। এরপর বের হওয়ার সময়ে আমার জিনিসপত্র দেখিয়ে আমি বের হয়ে আসি।


আরও পড়ুন: কখনোই আমি সুবিধাবাদী ছিলাম না: পূজা চেরি


জ্যোতি আরও বলেন, এত বছর ধরে আমি অভিনয় করছি। কখনও দেশ ছেড়ে বাহিরে চলে যাওয়ার কথাও চিন্তা করিনি। তবুও এই অপমান কি আমার প্রাপ্য ছিল? কোনো দলের সমর্থক ছিলাম বলে কি দেশটা আমার নয়? আমি তাহলে কোথায় যাব? এই প্রশ্ন আপনাদের কাছেই রেখে গেলাম।


এ ঘটনায় শিল্পকলার সিনিয়র ইনসট্রাক্টর আইরিন পারভীন লোপা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২.৩০ মিনিটের পর অফিসে আসেন জ্যোতি। আসার পরই বাইরে বিভিন্ন বিভাগের সহকর্মীদের জড়ো হতে দেখে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। পরে আমরা তাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলি। কারণ, তিনি ‘আলো আসবেই’ নামে একটি গ্রুপে যুক্ত হয়ে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অনেক কথা বলেছেন। এমন মানুষকে আমরা সহকর্মী হিসেবে কখনোই চাই না। জ্যোতিকা জ্যোতি নিজেকে এখনও সরকারের নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ভাবছেন। যে সরকার নেই, সেই সরকারের দাপট দেখাচ্ছেন। আমরা তাকে সসম্মানে এখান থেকে চলে যেতে বলেছি।


এমএল/