রোমান হত্যার বিচার চেয়ে মায়ের একক লড়াই

রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে শুরু করে পুরান ঢাকা, তাঁতীবাজার ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের আশপাশ—দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে একাই লড়ছেন রুনা আক্তার। কিন্তু এটি কোনো নির্বাচনী প্রচারণা নয়।
বিজ্ঞাপন
১৫ বছর বয়সী একমাত্র সন্তান রোমান দেওয়ানের খুনিদের বিচার চেয়ে তিনি প্রতিবাদের “দেয়ালচিত্র” তৈরি করছেন। প্রতিটি পোস্টারে লেখা রয়েছে—‘রোমান হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’।
রোমান গত ১৯ অক্টোবর রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বয়েজ ক্লাব-সংলগ্ন এলাকায় খুন হন। দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে চলা পরিবারের একমাত্র সন্তান রোমান মায়ের জীবনের বড় প্রেরণা ছিলেন। নিহতের পরিবারের অনুপস্থিতিতে সে পড়াশোনা বন্ধ করে পোশাক কারখানায় প্রিন্টের কাজ করত। হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই দিন আগে প্রথম সপ্তাহের বেতন থেকে মা ও দাদিকে কিছু টাকা দিয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
রোমানের মা জানান, সবকিছুই শুরু হয় টিকটকের একটি ভিডিও থেকে। রোমানের এক খালা ভিডিওটি বানানোর পর সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হয়। এরপর স্থানীয় পরিচিত রিফাত এবং রোমানের মধ্যে পাল্টা ভিডিও তৈরি ও মন্তব্যের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। হত্যার রাতে রোমান কাজ শেষে দাদির বাসায় যাচ্ছিলেন, তখন রিফাতসহ কয়েকজন তার গতিরোধ করে ছুরিকাঘাত করে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
রোমানকে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, রোমানের বুকে কলম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ডান পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রুনা আক্তার জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকে একজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাকিদের এখনও ধরা পড়েনি। প্রশাসন যাতে অন্য আসামিদের দ্রুত ধরে বিচার নিশ্চিত করে, সেই উদ্দেশ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে চলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা গরিব! ছেলের বন্ধু ও পরিচিতদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পোস্টার বানিয়েছি। কেউ রাতের আঁধারে কিছু পোস্টার ছিঁড়েও ফেলেছে।
রুনা আরও জানান, পাঁচ বছর কাতার ও দুবাইয়ে কাজ করেছেন, যা দিয়ে ছেলে ও পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাতেন। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পরিবারের উপর দায়িত্ব বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
তিনি কান্না থামাতে না পেরে বলেন, ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল। তাও শেষ হয়ে গেল। প্রথম সপ্তাহের বেতন হাতে নিয়ে রোমান বলছিল, মা, আমাদের খারাপ সময় কাটবে। কিন্তু সামান্য ঘটনা নিয়ে আমার ছেলের জীবন শেষ হয়ে গেল। আমি শেষ পর্যন্ত লড়ব।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক ইবনে ফরহাদ জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত রিফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যায় আরও চারজন জড়িত। দুই তরুণকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া একই রাতে আরেকটি কিশোর গ্রুপ রোমানের এক বন্ধুকে মারধর করেছে, যা তদন্তাধীন।
বিজ্ঞাপন
রুনা আক্তার জানিয়েছেন, গত এক মাসে পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তবে হঠাৎ রাতে তদন্ত কর্মকর্তা ফোন করে জানিয়েছেন, আসামিরা দ্রুত ধরা পড়বে। এর আগে তিনি পুলিশকে অভিযুক্তদের মোবাইল নম্বরও প্রদান করেছিলেন।
রুনা আক্তারের এই একাকী লড়াই একটি মায়ের হৃদয়ের আর্তনাদকে দেশের সামনে তুলে ধরছে—ন্যায় ও বিচার না মিললে মাতৃভালবাসা কষ্টের আর্তনাদে রূপ নেবে।








